গলদা চিংড়ির জীববিদ্যা (১.১)

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | - | NCTB BOOK
552
552
Please, contribute by adding content to গলদা চিংড়ির জীববিদ্যা.
Content

গলদা চিংড়ির বাহিক্য গঠন ও অভ্যন্তরীণ অংগসমূহ (১.১.১)

388
388

গলদা চিংড়ি একটি অমেরুদন্ডী প্রাণী। এদের দেহ শক্ত কাইটিনের আবরণে ঢাকা, যাকে বহিঃকঙ্কাল বলে। গলদা চিংড়ির দেহ মুলত দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশ শিরোবক্ষ (Cephalothorax) শির বা মাথা এবং বক্ষাঞ্চল বা Thorax এর সমন্বয়ে গঠিত। দ্বিতীয় অংশ উদারাঞ্চল বা Abdomen । শিরোবক্ষ অঞ্চলটি একটি শক্ত আবরণ বা ক্যারাপেস দ্বারা ঢাকা থাকে।

গলদা চিংড়ির দেহে মোট ১৯টি খন্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি খন্ড মস্তক অঞ্চলে, ৮টি বক্ষাঞ্চলে ও ৬টি উদরাঞ্চলে অবস্থিত। ভ্রূণ অবস্থায় এর দেহে ২০টি খন্ড থাকে। এর মধ্যে ১ম খন্ডটি পরবর্তীতে দুদিকে চক্ষুবৃন্ত গঠন করে বিধায় ভ্রূণ পরবর্তী অবস্থায় ১৯টি খন্ড দৃশ্যমান থাকে। গলদা চিংড়ির মাথা ও বুককে এক সঙ্গে শিরোবক্ষ বা সেফালোথোরোক্স বলা হয়।

শিরোবক্ষের পিছনেই উদর অবস্থিত। উদর ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে টেলসন বা লেজে শেষ হয়েছে। টেলসনের উভয় পার্শ্বে পুচ্ছ পাখনা বা ইউরোপড (Uropod) অবস্থিত। চিংড়ির বহিরাবরণ কাইটিন নামক খোলস দিয়ে আবৃত যা ক্যালশিয়াম উপাদান দিয়ে গঠিত। এই খোলসগুলো চিংড়ির দেহের প্রতিটি অংশকে ঢেকে রাখে এবং একটি খোলস অপর খোলসের সঙ্গে একটি সন্ধিল পর্দা (Arthrodial membrane) দিয়ে সংযোগ রক্ষা করে। ফলে খোলসগুলো সহজেই প্রয়োজনে সম্প্রসারিত ও সংকুচিত হতে পারে। চিংড়ির খোলসের অনেকগুলো স্তর আছে। একেবারে উপরের স্তরটি শক্ত ও কোষবিহীন। শক্ত স্তরের নিচে একপ্রস্থ কোষ অবস্থিত। কোষের স্তরে রসগ্রন্থি বিদ্যমান। স্কেলেরাইট (Sclerite) দ্বারা চিংড়ির প্রতিটি দেহখন্ড আবৃত থাকে। উদরে প্রধাণত দু'টি স্কেলেরাইট অবস্থিত; পৃষ্টদেশে অবস্থিত ছোট খন্ডটিকে প্লিউরন (Pleuron) বলা হয়।

চিত্র-১.১: গলদা চিংড়ির বাহিক্য গঠন

চিংড়ির শিরোবক্ষ পৃষ্ঠাদেশাবরণ (Dorsal shield) বা শিরোবর্ম দ্বারা ঢাকা থাকে যা ক্যারাপেস (Carapace) নামে পরিচিত। পৃষ্টদেশের আবরণ উভয় পার্শ্ব হতে নিচের দিকে সম্প্রসারিত হয়ে ফুলকার উভয় দিকে একটি আবরণের সৃষ্টি করে। এই আবরণকে ব্রঙ্কিওস্টেগাইট (Branchiostegite) বলা হয়। এই আবরণ চিংড়ির শ্বাসঅঙ্গ বা ফুলকাকে রক্ষা করে। পৃষ্টদেশের আবরণ হতে মধ্যরেখা বরাবর একটি অংশ সামনের দিকে ক্রমশ লম্বা হয়ে পার্শ্ব চাপা ও ঊর্ধ্বমুখী সরু করাতের মতো সম্প্রসারিত হয়েছে যা রোস্টাম (Rostrum) নামে পরিচিত। এই রোস্টাম ক্যারাপেসের সম্মুখভাগে অবস্থিত। উপরের ও নিচের কিনারায় খাঁজ কাটা থাকে।

চিংড়ি রোগ্রামের সাহায্যে শত্রুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করে থাকে। রোষ্ট্রামের গোড়ার উভয় পার্শ্বে ছোট দুইটি কণ্টক থাকে। সামনের কণ্টকটিকে অ্যান্টেনাল কণ্টক (Antennal spine) ও পিছনের কণ্টকটিকে যকৃৎ কণ্টক (Hepatic spine) বলা হয়। রোট্রামের গোড়ার উভয়দিকে একটি করে সবৃন্তক পুঞ্জাক্ষি (Stalked compound eye) অবস্থিত। বৃত্তের সাহায্যে চিংড়ি পুঞ্জাক্ষিকে চারিদিকে ঘুরাতে সক্ষম হয়। শিরোবক্ষের অম্লীয়দেশের অগ্রভাগে ছোট মুখ অবস্থিত। মুখের সামনের উপরের অংশকে লেগ্রাম (Labrum) বা উর্ধ্বোষ্ট ও নিচের অংশকে লেবিয়াম (Labium) বা নিম্নোষ্ঠ বলে। চিংড়ির লেজের অঙ্কীয়দেশে পায়ু অবস্থিত। চিংড়ির উপরের পঞ্চম উপাঙ্গের গোড়ার ভেতরের দিকে পুরুষ চিংড়ির জনন রন্ধ্র এবং তৃতীয় উপাঙ্গের ঠিক একই স্থানে স্ত্রী চিংড়ির জনন রন্ধ উন্মুক্ত হয়।

চিত্র-১.২: গলদা চিংড়ির রোট্রাম ও মাথার বিভিন্ন উপাঙ্গ  

Content added By

চিংড়ির উপাঙ্গসমূহ (১.১.২)

1.1k
1.1k
Please, contribute by adding content to চিংড়ির উপাঙ্গসমূহ.
Content

শির উপাঙ্গ (Cephalic appendage )

143
143

শির-উপাম্প মোট পাঁচ জোড়া। এগুলো চিংড়ির দেহের ২য় থেকে ৬ষ্ঠ দেহখন্ডাংশে অবস্থান করে।

চিত্র-১.৩: চিংড়ির শিরা-উপাম্প: অ্যান্টিনিউল (Antemule) এবং অ্যান্টেনা (Antenna)

এক. অ্যান্টিনিউল (Antennule)

  • চিংড়ির দেহের প্রথম জোড়া উপাঙ্গ হচ্ছে অ্যান্টিনিউল যা পুঞ্জাক্ষি বৃন্তের নিকটে অবস্থিত।
  • চিংড়ির প্রথম জোড়া উপাঙ্গ দেহের দ্বিতীয় খণ্ডক থেকে উদ্ভুত হয় (ভূণাবস্থায় প্রথম যে খণ্ডক
  • আত্মপ্রকাশ করে তাতে কোন উপাঙ্গ থাকে না)। অ্যান্টিনিউলের প্রোটোপোডাইট তিনটি ধারাবাহিক খণ্ডাংশ নিয়ে গঠিত। যথা- গ্রিকরা (Precoxa), কক্সা (Coxa) ও বেসিস (Basis ) ।
  • চিংড়ির ভারসাম্য রক্ষাকারী অঙ্গ স্ট্যাটোসিস্ট (Statocyst) প্রিকক্সার ভিতরের পারে অবস্থিত।
  • কক্সা অপেক্ষাকৃত ছোট এবং সিলিন্ডার আকৃতির।
  • বেসিস তুলনামূলকভাবে লম্বা যা বহু গাঁটযুক্ত দুইটি ফ্লাজেলা বহন করে।
  • দুইটি ফ্লাজেলার মধ্যে বাইরেরটি আবার দুইটি অসমান অংশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে বড়টি স্পর্শেন্দ্রিয়ের কাজ করে এবং ছোটটি ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের কাজ করে।

দুই. অ্যান্টেনা (Antenna)

  • মৌখিক ও তৃতীয় দেহখণ্ডকের একজোড়া উপাঙ্গের নাম হচ্ছে অ্যান্টেনা।
  • এর প্রোটোপোডাইট দুইটি ধারাবাহিক অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- কক্সা ও বেসিস।
  • প্রোটোপোডাইট স্ফীত কারণ এর ভেতরে রেচন অঙ্গ থাকে যা বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে।
  • বেসিস হতে দুইটি শাখা বের হয়েছে যার একটি স্কোয়ামা (Squama) বা স্কেল (Scale) এবং অন্যটি লম্বা, সরু আকৃতির ফ্লাজেলাম (Flagellum) (বহুবচনে ফ্লাজেলা, Flagella]
  • সাঁতারের সময় স্কোয়ামা ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে এবং ফ্লাজেলাম স্পর্শেন্দ্রিয়ের কাজ করে।

তিন. ম্যান্ডিবল (Mandible)

  • চিংড়ির ৪র্থ দেহখণ্ডক ও অপ্রমৌখিক উপাঙ্গ হচ্ছে ম্যান্ডিবল যা মোটা, শক্ত, সংখ্যায় একজোড়া ও মুখের উভয় পাশে অবস্থিত।
  • প্রতিটি ম্যান্ডিবল কক্সা নিয়ে গঠিত যা শক্তিশালী চোয়াল গঠন করে।
  • এর প্রোক্সিমাল (Proximal) অংশ চামচ আকৃতির যা এপোফাইসিস (Apophysis) নামে পরিচিত এবং ডিস্টাল (Distal) অংশ নিরেট মস্তক গঠন করে।
  • মস্তকের একটি অংশ চ্যাপ্টা যা কর্তন উপাঙ্গ (Inciser process) হিসেবে বিবেচিত এবং এখানে তিনটি দাঁত খুব কাছাকাছি থাকে।
  • মস্তকের অন্য অংশটি ভোঁতা যা শেষক উপাঙ্গ (Molar process) হিসেবে বিবেচিত এবং এখানে পাঁচ-ছয়টি হলুদ বা বাদামী রংয়ের দাঁত থাকে।
  • ম্যান্ডিবলের প্রধান কাজ হচ্ছে খাবারকে খন্ড খন্ড বা পেষণ করা। খাদ্য গ্রহণেও ম্যান্ডিবল সহায়তা করে।

চিত্র-১,৪: চিংড়ির শির-উপাল: ম্যান্ডিবল (Mandible), ম্যাক্সিগুলা (Maxihala) এবং ম্যাক্সিলা (Maxilla)

চার. ম্যাক্সিগুনা (Maxilula)

  •  চিংড়ির ৫ম দেহখণ্ডকের উপাম্পের নাম ম্যাক্সিগুলা যা চিংড়ির সবচেয়ে ছোট উপাঙ্গ এবং সংখ্যায় একজোড়া।
  • তিনটি পাতলা স্বচ্ছ আঁশের মত অংশ নিয়ে ম্যাক্সিমুলা গঠিত।
  • পাতলা তিনটি অংশের মধ্যে দুইটি প্রোটোপোভাইটের প্রতিনিধি যা ভিতরের দিকে চোয়াল হিসেবে থাকে এবং ন্যাথোবেস (Gnathobase) নামে পরিচিত।
  • এর এন্ডোপোডাইট বাঁকানো এবং এক্সোপোডাইট অনুপস্থিত।
  • এটি খাবারকে ছোট ছোট করতে সাহায্য করে। এমন কি খাবারকে মুখে প্রবেশ করাতেও সহায়তা করে।
     

পাঁচ. ম্যাক্সিমা (Maxilla)

  • চিংড়ির ষষ্ঠ দেহ খণ্ডকের উপাল জোড়া হচ্ছে ম্যাক্সিলা যা পাতলা পাতার মত এবং ম্যাক্সিলা অপেক্ষা বড়।
  • অতি ছোট করা ও তুলনামূলক বড় বেসিস নিয়ে প্রোটোপোডাইট গঠিত।
  • অন্যদিকে এর এন্ডোপোডাইট ছোট।
  • আকারে অনেকটা বড় ও হাত পাখার মত এক্সোপোডাইট উপস্থিত যাকে ফ্যাকোনাথাইট (Scaphognathite) বলে।
  • চিংড়ির দেহে বিদ্যমান ম্যাক্সিলা শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করে।
Content added By

বক্ষ-উপাঙ্গ (Thoracle appendage)

134
134

বক্ষ-উপাঙ্গ মোট আট জোড়া। এগুলো চিংড়ির দেহের ৭তম থেকে ১৪তম দেহখন্ডাংশে অবস্থান করে।

এক. প্রথম ম্যাক্সিলিপেড (First Maxillipede ) 

  • চিংড়ির ৭ম দেহখন্ডকের উপাঙ্গ জোড়া হচ্ছে ১ম ম্যাক্সিলিপেড যা ম্যাক্সিলার পেছনে অবস্থিত ।
  • এটি ম্যাক্সিলিপেড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
  • এর প্রোটোপোডাইট কক্সা ও বেসিস নিয়ে গঠিত।
  • কক্সার বাইরের দিকে দ্বিখণ্ডিত পাতার মত এপিপোডাইট দেখা যায়।
  • বেসিস থেকে এন্ডোপোডাইট ও এক্সোপোডাইট উদ্ভূত হয়।
  • মুখ হতে বর্জিত খাবার দূরীকরণ, খাবার কাটা-ছেঁড়া ও শ্বসনে যথাক্রমে এক্সোপোডাইট, প্রোটোপোডাইট এবং এপিপোডাইট সহায়তা করে।

চিত্র-১.৫: চিংড়ির বক্ষ-উপাম্প: প্রথম ম্যাক্সিলিপেড (First maxillipede), দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড (Second maxillipode) ও তৃতীয় ম্যাক্সিলেপেড (Third maxillipede)

 

দুই. দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড (Second Maxillipede)

  • চিংড়ির ৮ম দেহখণ্ডকের উপাঙ্গ হচ্ছে দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড যা প্রথম ম্যাক্সিলিপেড এর পেছনে অবস্থিত।
  • এর প্রোটোপোডাইট কক্সা ও বেসিস নিয়ে গঠিত।
  • একটি ছোট এপিপোডাইট ও একটি ফুলকা (Gill) কক্সার বাইরের দিকে সংযুক্ত থাকে।
  • এর এন্ডোপোডাইট পাঁচটি অংশ নিয়ে গঠিত যথা- ইস্টিয়াম (Ischium), মেরাস (Merus), কারপাস (Carpus), প্রোপোডাস (Propodus) ও ডাকটাইলাস (Dactylus)।
  • এক্সোপোডাইট চাবুকের মত লম্বা।
  • দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড এর কাজ হল খাবার গ্রহণ ও শ্বসন।
     

তিন. তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড (Third Maxillipede)

  •  চিংড়ির নবম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত একজোড়া উপাশই হচ্ছে তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড।
  • প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপেড এর চেয়ে তুলনামূলক বড়।
  • এপিপোডাইট কক্সার বাইরের দিকে অবস্থিত।
  • এন্ডোপোডাইট তিনটি খণ্ডাংশ নিয়ে গঠিত। যথা- প্রথম অংশ ইন্ডিয়াম (Ischium) ও মেরাস (Merus) একত্রে, মধ্যাংশ কারপাস (Carpus ) এবং শেষাংশ প্রোপোডাস (Propodus) ও ডাকটাইলাস (Dactylus) একত্রে গঠিত হয়।
  • অন্যদিকে এক্সোপোডাইট অখণ্ডিত, লম্বা ও সিলিন্ডার আকৃতির
  • তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেডের এক্সোপোডাইট গমনে সহায়তা করে। এছাড়াও খাবার গ্রহণ ও শ্বসনেও সহায়তা করে ।
Content added By

হাঁটার উপাঙ্গ (Walking leg)

114
114

চিংড়ির ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম এই পাঁচ জোড়া বক্ষ উপাঙ্গ হাঁটার উপাঙ্গ বা পেরিওপোড (Pereopod) নামে পরিচিত। এগুলো যথাক্রমে চিংড়ির ১০ম থেকে ১৪তম দেহখণ্ডাংশে অবস্থান করে। হাঁটার উপাঙ্গগুলো সাতটি ধারাবাহিক খণ্ডাংশ নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে প্রোটোপোডাইটের অংশ দুইটি যথা- কক্সা ও বেসিস এবং এন্ডোপোডাইটের অংশ পাঁচটি যথা- ইন্ডিয়াম, মেরাস, কারপাস, প্রোপোডাস ও ডাকটাইলাস। 

চিত্র-১.৬: চিংড়ির বক্ষ-উপাম্প ১ম ও ২য় হাঁটার উপাঙ্গ (Walking leg or Chelate leg.)

১ম হাঁটার উপাঙ্গ (First walking leg or Chelate leg)

  • চিংড়ির দশম দেহখন্ডাংশ থেকে উদ্ভুত
  • প্রথম হাঁটার উপাশের শেষ খন্ডাংশ (ডাকটাইলাস, Dectylus) প্রোপোডাসের সাথে যুক্ত না থেকে এর নিকটে অবস্থান করে। 
  • এর শেষভাগ বাঁকানো এবং দেখতে সাঁড়াশির মত যা চেলা (Chela) নামে পরিচিত। 
  • কয়েকটি দাঁতের মত গঠন সাঁড়াশির ভেতরের দিকে দেখতে পাওয়া যায়।
  • খাবার গ্রহণ, আত্মরক্ষা ও প্রতিপক্ষকে দমনের কাজে সহায়তা করে।

 

২য় হাঁটার উপাঙ্গ (Second walking leg or chelate leg )

  • চিংড়ির ১১তম দেহখন্ডাংশ থেকে উদ্ভূত।
  • চিংড়ির দেহের দ্বিতীয় হাঁটার উপাঙ্গ অনেক বড় এবং শক্তিশালী।
  • অসংখ্য তির্যক আকৃতির কন্টক এই উপাম্পের ইস্টিয়ামে থাকে।
  • সমবয়সী পুরুষ চিংড়ির এই উপাঙ্গ স্ত্রী চিংড়ি অপেক্ষা অনেক উজ্জ্বল।
  • অনেক সিটা ও কণ্টক এ উপাঙ্গের সাঁড়াশিতে দেখতে পাওয়া যায়।
  • খাবার সংগ্রহ ও গ্রহণ, আত্মরক্ষা এবং প্রতিপক্ষকে দমনে সহায়তা করে।
Content added By

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হাঁটার উপাঙ্গ (Third, Fourth Fifth walling or Non chelate leg.)

110
110
  • এই উপালগুলো প্রায় একই রকম এবং যথাক্রমে ১২, ১৩ ও ১৪তম দেহখভাংশ থেকে উদ্ভূত
  • এই উপাঙ্গগুলোর মধ্যে সাঁড়াশি (Chelate) অংশটি অনুপস্থিত।
  • অর্ধচন্দ্রাকৃতির স্ত্রী জনন ছিন্ন স্ত্রী চিংড়ির তৃতীয় হাঁটার উপালের গোঁড়ায় অবস্থিত।
  • পুংজনন ছিন্ন পুরুষ চিংড়ির পঞ্চম হাঁটার উপাম্পের গোঁড়ায় অবস্থিত।

চিত্র-১.৭: চিংড়ির বক্ষ-টেপাম্প: তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হাঁটার উপাঙ্গ (Third, Fourth and Fifth walking leg or Non-chelate leg)

 

Content added By

উদর-উপাঙ্গ (Abdominal appendage)

141
141

চিংড়ির ছয় জোড়া উদর-উপাঙ্গকে প্লিওপোড (Pleopod) বা সন্তরণী উপাঙ্গ বলে। এদের প্রত্যেকের প্রোটোপোডাইট কক্সা ও বেসিস নিয়ে গঠিত। বেসিস দুইটি পাওনা শাখা বহন করে যারা এন্ডোপোডাইট ও এক্সোপোডাইট নামে পরিচিত। উদর-উপাদগুলো চিংড়ির ১৫তম থেকে ২০ তম দেহখণ্ডে অবস্থান করে।

এক. প্রথম উদরীয় উপাঙ্গ (First abdominal appendage)

  • প্রথম উদরীয় উপাঙ্গ জোড়া চিংড়ির ১৫তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত। 
  • এর প্রোটোপোডাইট করা ও বেসিস নিয়ে গঠিত।
  • কক্সা আকারে ছোট রিং আকৃতির। 
  • বেসিস লম্বা ও গোলাকার।
  • এন্ডোপোডাইট আকারে ছোট।
  • অ্যাপেনডিক্স ইন্টারনা (Appendix interna) সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।

চিত্র-১.৮: চিংড়ির প্রথম ও দ্বিতীয় উদরীয়-উপাঙ্গ

 

দুই. দ্বিতীয় উদরীয় উপা (Second abdominal appendage)

  •  দ্বিতীয় উদরীয় উপাঙ্গ জোড়া চিংড়ির ১৬তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভূত।
  • ছোট কক্সা ও লম্বা ও গোলাকার বেসিস নিয়ে প্রোটোপোডাইট গঠিত।
  • পুরুষ চিংড়ির ২য় উদর উপাঙ্গে অ্যাপেনডিক্স ইন্টারনার (Appendix interna) ভিতরের দিকে অ্যাপেনডিক্স ম্যাসকুলেনা (Appendix masculina) থাকে যা স্ত্রী চিংড়িতে অনুপস্থিত।

 

তিন-পাঁচ. তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম উদরীয় উপাঙ্গ (Third, fourth and fifth abdominal appendage)

  • তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম উদরীয় উপাশ জোড়া যথাক্রমে চিংড়ির ১৭, ১৮ ও ১৯তম দেহখণ্ডক থেকে উদ্ভুত এবং গঠনগত দিক থেকে প্রায় একই রকম।
  • প্রতিটি উপালে কক্সা ও বেসিস নিয়ে প্রোটোপোডাইট গঠিত।
  • বেসিস এক্সোপোডাইট এবং এন্ডোপোডাইট বহন করে। 
  •  এন্ডোপোডাইটের ভিতরের দিকে বাঁকানো একটি অংশ থাকে যাকে অ্যাপেনডিক্স ইন্টারনা (Appendix interna) বলে।
  •  সমস্ত উদর উপাঙ্গ সাঁতারে সহায়তা করে এবং স্ত্রী চিংড়িতে ডিম ধরে রাখতে সহায়তা করে।

চিত্র-১,৯: চিংড়ির উদরীয় উপাঙ্গ- ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম (Abdomeinal Appendage) 

 

৬ষ্ঠ উদরীয় উপাঙ্গ: পুচ্ছপদ (Uropod)

  • চিংড়ির ২০তম দেশশুক থেকে উদ্ভূত সর্বশেষ জোড়া উপাম্প ইউরোপোড বা পুচ্ছপদ নামে পরিচিত এবং টেলসনের (Telson) উভয় পাশে একটি করে অবস্থান করে। 
  • প্রোটোপোডাইট ছোট পুরু ও প্রশস্ত ত্রিকোণাকার পাতের মত চ্যাপ্টা যা করা ও বেসিস একত্রিত হয়ে গঠিত হয়েছে।
  • এক্সোপোডাইট এক্ষোপোডাইটের থেকে তুলামূলক বড় ও প্রশস্ত এবং দুইটি অসম অংশ নিয়ে গঠিত।
  • এন্ডোপোডাইট এক্সোপোডাইটের চেয়ে তুলনামূলক ছোট এবং একক অংশ নিয়ে গঠিত।
  • সাঁতারের সময় ইউরোপোড বা পুচ্ছপদ হালের মত কাজ করে অর্থাৎ ভারসাম্য অঙ্গ হিসাবে কাজ করে।

চিত্র-১.১০: চিংড়ির ৬ষ্ঠ উদরীয় উপাঙ্গ পুচ্ছপদ (Uropod)

 

চিংড়ির বিভিন্ন উপাঙ্গের কাজঃ

অঙ্গ উপাঙ্গউপাঙ্গের কাজ
মাথা 

অ্যান্টিনিউন

অ্যান্টেনা 

পুঞ্জাক্ষি 

রোট্রাম 

ম্যাজিবল 

ম্যাক্সিনুলা 

ম্যাক্সিলা 

শ্বাস ও স্পর্শ 

দেহের ভারসাম্যতা, স্বাদ ও স্পর্শ

তীব্র ও খ্রিমিত বা অস্পষ্ট আলোতে দেখতে সহায়তা করে।

আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।

খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য চিবানো ও খাদ্য নড়াচড়ার কাজে সাহায্য করে।

বুক 

প্রথম ম্যাক্সিলিপেড
দ্বিতীয় ম্যাক্সিলিপের তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড

 

প্রথম চলন পদ
দ্বিতীয় চলন পদ
তৃতীয় চলন পদ চতুর্থ চলন পদ
পঞ্চম চলন পদ

স্পর্শ, স্বাদ, খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য টুকরা করা, মুখ থেকে ৰঞ্জিত খাদ্যাংশ দূরীকরণ ও শ্বাসকার্যে সহায়তা করা।

 

 

খাদ্য শুঁকড়িয়ে ধরা এবং জন্মরক্ষা ও ইটার কাজ করে। ফুলকাতে পানি সরবরাহ ও বসন কাজে সহায়তা করে ।

উদর 

প্রথম প দ্বিতীয় সন্তরণ পর

 

তৃতীয় সন্তরণ পদ চতুর্থ সন্তরণ পদ পঞ্চম সন্তরণ পদ

শুক্রানু স্থানান্তরের কাজ করে। সন্তরণ কাজে সহায়তা করে।

 

পানি সংবহনে সহায়তা করে সন্তরণে কাজ করে 

ডিম রক্ষার কাজ করে

 পুচ্ছ পদসন্তরণ কাজে সহায়তা করে। প্রয়োজনে পিছনের দিকে চলে যেতে সহায়তা করে।
Content added By

গলদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ (১.১.৩)

132
132

চিংড়ির অভ্যন্তরীণ অঙ্গসংস্থান প্রধানত: পুষ্টিতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র ও জননতন্ত্র নিয়ে গঠিত।

Content added By

গলদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র (Digestive system ) (১.১.৩.১)

569
569

যেসব অঙ্গ-প্রতঙ্গ চিংড়ির পরিপাক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে তাদের সমষ্টিকে চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র বলা হয়। চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র সাধারণত পরিপাকনালী ও হেপাটোপ্যানক্রিয়াস নামক পরিপাক গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত। পরিপাকনালী মুখগহবর থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। পরিপাকনালী প্রধানত তিনটি অংশে বিভক্ত। যথা- 


ক) অগ্রপরিপাকনালী (Forgut): মুখ, মুখগহ্বর, অন্ননালী ও পাকস্থলী নিয়ে অগ্রপরিপাকনালী গঠিত। মস্তক খণ্ডের নিচের দিকে মুখের অবস্থান। এর অগ্রভাগে উর্ধ্বোষ্ঠ বা লেব্রাম এবং পশ্চাৎ দিকে নিম্নোষ্ঠ বা লেবিয়াম অবস্থিত। এছাড়া ম্যান্ডিবলের দুই পাশে দুইটি ইনসিসর প্রসেস থাকে। নিয়োষ্ঠের উভয় পার্শ্বে দুইটি প্রশস্ত অংশ থাকে যা প্যারাগনাথা (paragnatha) নামে পরিচিত।

চিত্র-১.১১: গলদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র

মুখ গহ্বর (Buccal cavity): মুখের পিছনেই মুখ গহ্বর অবস্থিত। মুখ গহ্বরের দুই পাশে ম্যান্ডিবলে মোলার প্রসেসর থাকে, এর সাহায্যে খাদ্যবস্তু মুখ গহ্বরে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়।

অন্ননালী (Oesophagus): এটা পেশিযুক্ত মোটা নালীবিশেষ যা মুখ গহ্বরের পিছনে থেকে শুরু হয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করেছে। এই প্রবেশ পথে কপাটিকা থাকে। এর ফলে খাদ্যবস্তু একবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে তা আর অন্ননালীতে ফিরে আসতে পারে না।

পাকস্থলী (Stomach): পরিপাকনালীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের থলিটির নাম পাকস্থলী। পাকস্থলী চিংড়ির শিরোবক্ষের বেশির ভাগ স্থান দখল করে থাকে। পাকস্থলী প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-

i) কার্ডিয়াক পাকস্থলী ও

ii) পাইলোরিক পাকস্থলী

খ) মধ্য পরিপাকনালী (Mid gut): পাইলোরিক পাকস্থলীর পরবর্তী ভাগ থেকে মধ্য পরিপাকনালী শুরু। এই নালীটি লম্বা, সরু, সোজা ও নলাকৃতির এবং দেহের মাঝামাঝি স্থান বরাবর পিছনের দিকে ষষ্ঠ উদর খন্ডক পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্য পরিপাকনালীর ভেতরের দেয়াল এপিথেলিয়াম স্তর দ্বারা আবৃত এবং পিছনের অংশ লম্বালম্বি অসংখ্য ভাঁজ দ্বারা সজ্জিত থাকে।

গ) পশ্চাৎ পরিপাকনালী ( Hind gut): মধ্য পরিপাকনালীর পরবর্তী অংশকে পশ্চাৎ পরিপাকনালী বলে এবং এই নালী পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। পরিপাকনালীর এই অংশ স্ফীত হয়ে পুরু মাংসপেশী দ্বারা গঠিত ছোট থলিতে পরিণত হয়েছে। এই থলিকে মলাশয় বা রেকটাম (Rectum) বলে। এই মলাশয় সর্বশেষ উদর উপাঙ্গ দুটির মাঝ বরাবর একটি ছিদ্র পথে উন্মুক্ত হয়। এই পথকে পায়ুপথ (Anus) বলে। পায়ুপথে মল দেহের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

যকৃত অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি (Hepatopancreas)

শিরোবক্ষের গহ্বরে কমলা রং এর এক প্রকার অঙ্গ দেখা যায়, একে যকৃত অগ্ন্যাশয় বলে। এই অঙ্গটি কার্ডিয়াক পাকস্থলীর শেষ অংশ, পার্শ্বদেশ, পাইলোরিক পাকস্থলী ও মধ্য অন্ননালীর কিছু অংশকে ঢেকে রাখে। হেপাটোপ্যানক্রিয়াস প্রধানত পাচক রস নিঃসরণ, খাদ্যরস শোষন এবং গ্লাইকোজেন ও ফ্যাট প্রভৃতি সঞ্চয় করে রাখে। এই গ্রন্থি যকৃত ও অগ্ন্যাশয় উভয়ের কাজ করে বলে একে হেপাটোপ্যানক্রিয়াস বা যকৃত - অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি বলে।

Content added By

চিংড়ির খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাক প্রক্রিয়া (১.১.৪)

118
118

চিংড়ি সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় চলনপদের সাহায্যে খাদ্য ধরে এবং মুখছিদ্রের সম্মুখে নিয়ে আসে। এই ক্রিয়ায় তৃতীয় ম্যাক্সিলিপেড সাহায্য করে থাকে। চিংড়ি ম্যান্ডিবলের সাহায্যে খাদ্যবস্তু টুকরা টুকরা করে এবং পরে মোলার প্রসেস দ্বারা খাদ্যবস্তু চূর্ণ-বিচূর্ণ করে অন্ননালী ও কার্ডিয়াক পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।

অন্ননালী ও কার্ডিয়াক পাকস্থলী পেশীর সংকোচন ও প্রসারণের ফলে খাদ্য কার্ডিয়াক পাকস্থলীতে আসে। অতঃপর চূর্ণ-বিচূর্ণ খাদ্য কণাগুলো কার্ডিয়াক পাকস্থলী থেকে পাইলোরিক পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত পাচকরস যকৃত অগ্ন্যাশয় নালী দিয়ে পাইলোরিক পাকস্থলীতে প্রবেশ করে সেখানে খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হয়।

পাইলোরিক পাকস্থলীর ফিল্টার প্লেটের সাহায্যে পরিশ্রুত তরল খাদ্য যকৃত-অগ্ন্যাশয় নালীর ছিদ্রপথ দিয়ে স্বকৃত-অগ্ন্যাশয়ে প্রবেশ করে এবং এখানে খাদ্য শোষিত হয়। যকৃত- অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি হজম এবং খাদ্যের সার অংশ শোষণের কাজ করে থাকে। পাইলোরিক পাকস্থলীর অবশিষ্ট খাদ্যরস ও কঠিন অপাচ্য খাদ্য মধ্য অন্ননালীতে প্রবেশ করে। মধ্য অন্ননালীতে অস্ত্রের তরল খাদ্যের মূলরস শোষিত হয় এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশ মলরূপে সাময়িকভাবে মলাশয়ে জমা থাকে এবং পরে পায়ুপথ দিয়ে দেহের বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion